বিদেশে সাড়ে ৪ হাজার বাংলাদেশি কারাগারে

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫ সময়ঃ ৮:০৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:৫৮ অপরাহ্ণ

ইফতেখার রাজু, প্রতিক্ষণ ডট কম

0,,17348171_303,00জীবনের চাকা সচল করতে, সোনার হরিণের আশায় বিদেশে পাড়ি জমানো নিয়মিত ঘটনা। ভিটেমাটি বিক্রি করে, ধার-দেনা আর ব্যাংক থেকে চড়া সুদের টাকায় বিদেশেতো যেতেই হবে। এমনই ধারণা এখন বাংলাদেশের সব বয়সী মানুষের মধ্যে।

এছাড়া একটি শিক্ষিত গোষ্ঠীও আজকাল দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে ইউরোপে-আমেরিকার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

আর এই চিত্র দেশের গ্রাম থেকে নগরে একই রকম।  কিন্তু বিদেশ সবার জন্য নয়, তা প্রতীয়মান হয় বারবার। তবুও বিদেশ যেতে হবে।

তাই ভাগ্যান্বেষী বাংলাদেশিরা শুধু বিদেশের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই, দুনিয়াজুড়ে থাকা কারাগারগুলোয়ও এখন জড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের নাম। বিশ্বের ৪২টি দেশের কারাগারে বন্দী আছেন হাজারো বাংলাদেশি। এর মধ্যে কেউ কেউ খুন-ধর্ষণসহ অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে, আর বেশির ভাগই বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অনুপ্রবেশের দায়ে বন্দী বা আটক রয়েছেন। 

আর তারই একটি চিত্র তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা অপরাধে ৪ হাজার ৫৭৭ জন বাংলাদেশি এখনও কারাগারে আছেন।বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জডিয়ে পড়ার পাশাপাশি ওয়ার্ক পারমিটের অবৈধ ব্যবহার, অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রভৃতি কারণে তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করে সংশ্লিষ্ট দেশ।

২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জাতীয় সংসদে নিজাম উদ্দিন হাজারীর টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব তথ্য জানন।

মন্ত্রীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সৌদি আরবে ১ হাজার ৪৬, গ্রিসে ৩১১, আমিরাতে ৩০৮, মিয়ানমারে ২৯৯, দক্ষিণ আফ্রিকায় ২৬০, যুক্তরাজ্যে ২৪৪, কুয়েতে ২২০, ওমানে ১৮৮, যুক্তরাষ্ট্রে ১০৭, লিবিয়ায় ৬৭ ও পাকিস্তানে ১৩ জন আটক রয়েছেন।

অনুপ্রবেশের বাইরে অপরাধে জড়িয়ে কারাগারে আটক বা বন্দী আছেন ২৩ দেশে চার হাজার ৫৭৭ জন বাংলাদেশি। তারা চুরি, ডাকাতি, মাদক পাচারের মতো অপরাধে অভিযুক্ত বা দণ্ডিত।

এর মধ্যে সৌদি আরবে ১ হাজার ২৫৫, মালয়েশিয়ায় ১ হাজার ৯০, আরব আমিরাতে ৯৪৭, ওমানে ১৪৩, সিঙ্গাপুরে ৯০, ইরাকে ৮৮, মালদ্বীপে ৫২, হংকংয়ে ৩৮, ইতালিতে ৩৫, গ্রিসে ৩৫, কাতারে ২৩, তুরস্কে ৫, ব্রুনাইয়ে ৪, আজারবাইজানে ২ ও জর্জিয়ায় ২ জন।

অনুপ্রবেশজনিত অপরাধে দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দী বাংলাদেশিদের তালিকায় পরে আরও যুক্ত হন অস্ট্রেলিয়ায় ২৪১, ইতালিতে ৮২, চীনে ৭৬, জর্জিয়ায় ৬৩, লেবাননে ৫৫, তুরস্কে ৪৭, বাহরাইনে ৪৬, সার্বিয়ায় ৩৫, মিসরে ২৯, ইরানে ২৬, সুইডেনে ২৫, সাইপ্রাসে ২৪, মালদ্বীপে ২০, জর্ডানে ১৯, নেপালে ১৭, জাপানে ১২, পোল্যান্ডে ১২, আলজেরিয়ায় ৮, জিম্বাবুয়েতে ৮, কোরিয়ায় ৪, তানজানিয়ায় ৪, ইয়েমেনে ৪, নেদারল্যান্ডসে ৪, আজারবাইজানে ৩, ব্রুনাইয়ে ৩, বেলজিয়ামে ৩, ফ্রান্সে ২, কম্বোডিয়ায় ২, মরিশাসে ১, সিরিয়ায় ১ ও বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনায় ১ জন।

প্রসংগত, এর বাইরে আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, ওমান, মিসর, কাতার, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে খুন-ধর্ষণের মতো অপরাধে ইতিমধ্যে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে কার্যকরের অপেক্ষায় আছেন ৩৪ জন। মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার মতো অপরাধে বিচার চলছে ১৪৮ জনের।

tv2nls9adf.thumbnail মঙ্গলবার কুমিল্লা-৯ আসনের সংসদ সদস্য মো. তাজুল ইসলামের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও বলেন, বিদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি শ্রমিকদের বৈধকরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে ইতোপূর্বে মালয়েশিয়ায় ২ লাখ ৬৭ হাজার ৮০৩ জন, সৌদি আরবে প্রায় ৮ লাখ এবং ইরাকে ১০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীকে বৈধকরণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

এছাড়া অন্যান্য দেশে অবৈধভাবে যেসব বাংলাদেশি কর্মী বসবাস করছেন, তাদেরও পর্যায়ক্রমে বৈধকরণের বিষয়ে শ্রম কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

পশ্চিমা দেশে ৬৫ হাজার ৫৩৬ কর্মী প্রেরণ:
মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর অন্য আর এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের ১৬০টি দেশে বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণ করা হয়। ১৬০টি দেশে কর্মী প্রেরণ করা হলেও মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহে কর্মী বেশি প্রেরণ করা হয়।

এসব দেশের পাশাপাশি পশ্চিমা দেশে অধিকহারে বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণের বিষয়ে শ্রম কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ প্রচেষ্টার ফলে ২০০২ সাল হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার ৬৬ ও ইতালিতে ৫৫ হাজার ৪৭০ জনসহ মোট ৬৫ হাজার ৫৩৬ কর্মী কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় দেশগুলোতে গমন করেছে।

এদের অনেকে হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মারামারি, ছিনতাই, মাদক দ্রব্যের ব্যবসা, অপহরণ, ওয়ার্ক পারমিট না থাকা, ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও অবস্থান করা প্রভৃতি কারণে কারাগারে আটক আছেন।

তবে আটককৃত কর্মীদের বাংলাদেশি দূতাবাস/হাইকমিশনের মাধ্যমে মুক্ত করতে আইনগত সহায়তা দিয়ে দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।

 উল্লেখ্য, আমিরাতের কারাগারে বাংলাদেশি বন্দির সংখ্যা বেশ আগেই হাজার ছাড়িয়েছে। যেখানে ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের কথা জানা ছিল সেখানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তই আছেন ১৯ জন। আবার থাইল্যান্ডের কারাগার বা ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকা কয়েক শ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনতে জোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। সবচেয়ে বেশি ভারতের কারাগারে থাকা বাংলাদেশির সংখ্যা। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্যানুসারে শুধু পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কারাগারেই আছেন প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশি।

অন্যদিকে, দুর্গম পথে ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে আফ্রিকার দেশগুলোয় বন্দী হওয়া অনেকের তথ্যই পাওয়া যায় না। সেখানকার অনেক দেশে নিয়মতান্ত্রিক কারাগারের কাঠামোই নেই। সেখানে হয়তো কোনো ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয় গ্রেফতার হওয়া ভাগ্যান্বেষীদের।

প্রতিক্ষণ/এডি/ই রা

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G